ঢাকা, শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫

শেয়ার কারসাজিতে ব্যর্থ : মুনাফা অতিরঞ্জিত করতে ভিন্ন অপকর্ম

২০২৩ জুন ০৬ ০৯:১৯:৫২
শেয়ার কারসাজিতে ব্যর্থ : মুনাফা অতিরঞ্জিত করতে ভিন্ন অপকর্ম

বৈশ্বিক মন্দায় পৃথিবীর সবদেশেই উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। যা থেকে রেহাই পাইনি বাংলাদেশও। যে কারনে দেশীয় কোম্পানিগুলোরও মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকা আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। এই কোম্পানিটির বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু আগে কম বিক্রিতে যে পরিমাণ উৎপাদন ব্যয় হয়েছিল, এখন বিক্রি বৃদ্ধি সত্ত্বেও তারচেয়ে কম দেখিয়েছে।

১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের মূল ব্যবসা হচ্ছে গ্যালভানাইজড কারাজেটেড শীট, লোহার পাইপ ফিটিংস ও ব্রেক ড্রামস তৈরী ও বাজারজাত করা। তবে কিছু কোম্পানির ন্যায় এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষও শেয়ারবাজারের উত্থানে নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারেননি। তাই মূল ব্যবসা থেকে বেশি ঝুঁকে পড়ে শেয়ার ব্যবসায়।

এতে করে কোম্পানিটির আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) মুনাফায় বড় উত্থান হয়। যার পুরোটাই আসে শেয়ার ব্যবসা থেকে। কিন্তু শেয়ারবাজার মন্দায় চলতি অর্থবছর শেয়ার ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। তারপরেও নিজেদের শেয়ারও যেহেতু গেম্বলিংয়ে জড়ানো হয়েছে, তাই মুনাফা আগের অর্থবছরের ন্যায় রাখার চেষ্টা করতে গিয়ে জাগলারির বা কারসাজির আশ্রয় নিয়েছে।

দেখা গেছে, আগের অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ২০২১-মার্চ ২০২২) কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছিল ১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ওই সময় কোম্পানিটির শেয়ারবাজার থেকে আয় হয়েছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। তবে এই আয় কমে চলতি অর্থবছরের একইসময়ে নেমে এসেছে ৮৭ লাখ টাকায়।

যাতে স্বাভাবিকভাবেই কোম্পানির নিট মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু এমনটি হওয়ার কারনে যদি সঠিক মুনাফার তথ্য প্রকাশ করা হয়, তাহলে আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের শেয়ার দরে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারন এই কোম্পানির অর্থ দিয়ে যেমন অন্যসব কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে ভূমিকা রাখা হয়েছে, অন্যগুলোর দিয়ে আবার এই কোম্পানির শেয়ার কারসাজি করা হয়েছে। এই অবস্থায় আগের অর্থবছরের সঙ্গে মুনাফার সামঞ্জস্য রাখতে গিয়ে উৎপাদন ব্যয় কমানোর কারসাজির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।

শেয়ারবাজারের দীর্ঘ অভিজ্ঞ এক ট্রেকহোল্ডার বিজনেস আওয়ারকে বলেন, মূল ব্যবসাকে বাদ দিয়ে কোন কোম্পানির শেয়ার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক লক্ষণ না। কিন্তু অনেক কোম্পানিতেই এমনটি হয়েছে। এছাড়া ‘এ’ কোম্পানি থেকে ‘বি’ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ওই কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধি এবং ‘বি’ কোম্পানি থেকে ‘এ’ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ওই কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধির মতো কারসাজির ঘটনা ঘটেছে। এক্ষেত্রে অনেকটা পরস্পর যোগসাজোশে এক কোম্পানি আরেক কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধিতে দায়িত্ব পালন করেছে।

তিনি বলেন, মূল ব্যবসার পরিবর্তে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে সাময়িক লাভবান হওয়া যায়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সম্ভব না। এখানে রাতারাতি যেমন লাভ করা যায়, তেমনি রাতারাতি লোকসানও হয়। ওইসময় কোম্পানিকে লোকসানে পতিত হতে হয়। অতিত অভিজ্ঞতা এমনটিই বলে। তাই শেয়ারবাজারে একটি কোম্পানির কিছু বিনিয়োগ হতে পারে, কিন্তু মূল ব্যবসার থেকে বেশি না। যদি এমনটি কোন কোম্পানিতে হয়, সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদেরকে সচেতন হতে হবে।

কোম্পানিটির অনিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব অনুযায়ি, চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে পণ্য বিক্রি হয়েছে ৫৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর পেছনে উৎপাদন ব্যয় হয়েছে ৪০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অথচ আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৫২ কোটি ৫ লাখ টাকার বিক্রি করা পণ্য উৎপাদনে ব্যয় হয়েছিল ৪২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বিক্রি বাড়লেও ২ কোটি ১ লাখ টাকার উৎপাদন ব্যয় কমেছে।

স্বল্প মূলধনীর আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের ব্যবসাও ছোট। এছাড়া মুনাফাও আহামরি কিছু হয় না। কিন্তু ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে শেয়ারটির দর বেড়ে উঠে যায় অন্য উচ্চতায়। কোম্পানিটির ওই বছরের ১২ এপ্রিলের ৯৬.৩০ টাকার শেয়ারটি ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর লেনদেন শেষে বেড়ে দাড়াঁয় ৫৫৮.৬০ টাকায়। এক্ষেত্রে দর বাড়ে ৪৬২.৩০ টাকা বা ৪৮০ শতাংশ। তবে শেয়ারটি এখন ফ্লোর প্রাইস ২১৩.৩০ টাকায় নেমে আটকে আছে।

আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের চলতি অর্থবছরের ৩য় প্রান্তিক শেষে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের পরিমাণ (বাজার দর) দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৭ লাখ টাকায়। যার পরিমাণ গত বছরের ৩০ জুন ছিল ২৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে