ঢাকা, শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫

দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেন

কৃত্রিম মুনাফা দেখিয়ে হাজার কোটি টাকার ঋণ গ্রহণ : বিদেশে অর্থ পাচার

২০২৪ নভেম্বর ১৭ ১২:৪৮:২৯
কৃত্রিম মুনাফা দেখিয়ে হাজার কোটি টাকার ঋণ গ্রহণ : বিদেশে অর্থ পাচার

শেয়ারবাজারের একটি বিতর্কিত নাম জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেন। যিনি শুধু দূর্বল কোম্পানি শেয়ারবাজারে আনেন। যেগুলো কয়েক বছরের মধ্যে ধংস হয়ে যায়। যেসব কোম্পানির নামে নেন হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ। যা দিয়ে কোম্পানির কাজে লাগানো না হলেও ব্যক্তিগত কাজ ভালোভাবেই উদ্ধার হয়। যাতে কোম্পানি দূর্বল হলেও তিনি ফুলেফুঁপে উঠেন। এরমধ্যে বিদেশে টাকা পাঁচারতো রয়েছেই। যেগুলো দূর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে বের করে আনা সম্ভব।

জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেনের শেয়ারবাজারে অপকর্মের আজ তুলে ধরা হল প্রথম পর্ব। তার প্রতিটি কোম্পানি নিয়ে ধারাবাহিক সংবাদের পরবর্তী পর্বগুলো নিয়মিতভাবে তুলে ধরা হবে।

ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেন বর্তমানে এসএস স্টিলের কৃত্রিম মুনাফা দেখানোর জালিয়াতি করছেন। কারন মুনাফা দেখানো না হলে ব্যাংক ঋণ পাওয়া যাবে না। এছাড়া যেসব ঋণ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো নিয়েও তৈরী হবে জটিলতা। এতে করে পুরো বন্ধ হয়ে যাবে কোম্পানি। একইসঙ্গে বন্ধ হয়ে যাবে অর্থ পাচার।

এসএস স্টিলের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, এসএস স্টিলের নামে ঋণ নেওয়ার জন্য এমন কোন ভুয়া তথ্য নেই, যা কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে দেখানো হয় না। এরমধ্যে অন্যতম বিক্রি বেশি করে দেখিয়ে কৃত্রিম মুনাফা। প্রকৃতপক্ষে কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে। কিন্তু লোকসান দেখালে ঋণ পাওয়া যাবে না। তাই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ঋণ নেওয়ার জন্য ভূয়া মুনাফা দেখিয়ে আসছে।

এসএস স্টিলের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঋণ নিয়ে অনিয়মের মধ্যে থাকা জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেন আওয়ামীলীগের ক্ষমতা ব্যবহার করেছে ঋণ নিতে এবং টাকা পাঁচারে। যিনি শেখ হাসিনার মতো দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কারন তার অর্থ পাচারসহ শেয়ারবাজারের বিভিন্ন অনিয়ম বিচারের আওতায় আনা হলে শাস্তির মধ্যে পড়তে হবে।

জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেন জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনের পরে এসএস স্টিলকে শেয়ারবাজার আনেন। যিনি জেনারেশন নেক্সটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরে কোম্পানিটি থেকে বেরিয়ে গেছেন। যে কোম্পানিটি এখন ধুকে ধুকে চলছে।

আইপিওকালীন জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে ছিলেন জাভেদ অপগেনহ্যাপেন। আইপিওকালীন কোম্পানিটিতে তার ৯৩ লাখ ১০ হাজার বা ১০.৬৮ শতাংশ শেয়ার ছিল। যিনি এই শেয়ারের উপর ২০১১ ও ১২ সালে ২০ শতাংশ করে ৪০ শতাংশ বোনাস শেয়ার নেন। যা ২০১৩ সালে রাইট শেয়ারের আবেদনের আগেই বিক্রয় করে দেন। এছাড়া পরবর্তীতে প্রাপ্ত বোনাস শেয়ারসহ সব বিক্রয় করে দিয়েছেন।

এরপরে জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেন শেয়ারবাজারে আনেন এসএস স্টিল। দূর্বল এ কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজারে আনতে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে ব্যয় করেন। এক্ষেত্রে তিনি শেয়ার ও নগদ অর্থ লেনদেন করেন। যে কোম্পানিও এখন দূর্বল। তবে কোম্পানির নামে আছে হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ। যা ব্যবহার করেন ব্যক্তিগত কাজে।

জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেনের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে নানা কারসাজি, জালিয়াতিসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একাধিক ঘটনায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তার নিজের ও কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।

বর্তমানে আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আনা তার এসএস স্টিল কোম্পানিটি রয়েছে। যে কোম্পানিটির অবস্থা খুবই শোচণীয়। যেকোন সময় যেকোন কিছু ঘটতে পারে। ভূয়া প্লেসমেন্টের মাধ্যমে অতিরঞ্জিত করে কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজারে আনা হয়েছিল। ২০২০ সালে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে প্লেসমেন্ট ইস্যু করা ১ কোটি ৮০ লাখ শেয়ার আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ উঠলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ওই শেয়ার ফ্রিজ করে দেয়।

২০১৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এসএস স্টিলের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বা ৩টি প্রান্তিকে ১০ টাকার অভিহিত মূল্যের শেয়ারের বিপরীতে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.১২ টাকা।

অন্যদিকে ৩২৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এসএস স্টিলের সমন্বিত হিসাবে (সাবসিডিয়ারিসহ) ১ হাজার ৭০৫ কোটি ২০ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে। এরমধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ৬৯৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আর দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। যে কোম্পানিটির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে মোট ঋণ ছিল ৯৭৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ঋণ বেড়েছে ৭২৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

এ কোম্পানিটির গত ৩০ সেপ্টেম্বর ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এরপরে গত ৩১ ডিসেম্বর বেড়ে হয় ১ হাজার ৫৮৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। জাভেদ অপগ্যানহ্যাপেন ঋণ নিয়ে অর্থ পাচারের পাশাপাশি এরইমধ্যে যাচাই-বাছাই ছাড়াই এসএস স্টিলের নামে কয়েকটি স্টিল কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছেন। এছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফুওয়াং সিরামিক ও ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রেডস অধিগ্রহণ করেন। আর আজিজ পাইপস অধিগ্রহনের চেষ্টা করছেন। এই অধিগ্রহণের সময়ও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়।

এই প্রক্রিয়ায় জাভেদ নানা অনিয়ম করে আসলেও পদত্যাগে বাধ্য হওয়া বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী তাকে নিরঙ্কুশ সহযোগিতা করেছেন। এতে জাভেদও তার প্রতিদান দিয়েছেন। এছাড়া জাভেদ অনিয়মে সহযোগিতা নিতে যুক্তরাজ্যের সাবেক অ্যাম্বাসেডর ও তার সৎ মাকে ব্যবহার করেছেন।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে