ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

অন্যান্য দেশের তুলনায় আইপিও খুবই কম-ডিএসই চেয়ারম্যান

২০২৩ আগস্ট ২১ ২২:৩৭:৪১
অন্যান্য দেশের তুলনায় আইপিও খুবই কম-ডিএসই চেয়ারম্যান

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেছেন, এশিয়ার অন্যান্য স্টক এক্সচেঞ্জের তুলনায় বাংলাদেশে মার্চেন্ট ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি থাকা সত্বেও গত কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারে ভালো মানের আইপিও তালিকাভুক্তি হয় নাই৷ বর্তমানে বাংলাদেশে ৬৮টি মার্চেন্ট ব্যাংক কাজ করছে৷ কিন্তু নতুন আইপিও আনার অনুপাত অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম৷

সোমবার (২১ আগস্ট) স্টক এক্সচেঞ্জে নতুন নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি ত্বরান্বিত করা এবং পুঁজিবাজার উন্নয়নে মানসম্পন্ন আইপিও আনতে “মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সাথে তালিকাভুক্তি সংক্রান্ত সমন্বয় সভায়” প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সভায় ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম. সাইফুর রহমান মজুমদারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রেসিডেন্ট মোঃ ছায়েদুর রহমান৷ এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ডিএসই’র প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ এবং মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ডিভিশনের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মোঃ ছামিউল ইসলাম।

ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে ২১৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক আছে এবং সেখানে ২২১৩টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত। এছাড়া পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে ১৩টি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ৫২৪টি তালিকাভুক্ত কোম্পানি, বোরসা মালয়েশিয়ার ও কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জে ইস্যু ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অনুযায়ী গড় তালিকাভুক্ত কোম্পানি যথাক্রমে ২৪ এবং ১২টি৷ কিন্তু ডিএসইতে গড় মাত্র ৫টি।

এই সমস্যা কাটিয়ে তুলতে আরও অধিক আইপিও আনতে যৌথভাবে কাজ করতে হবে এবং ইস্যু ম্যানেজারদের সক্রিয় হতে হবে বলে জানান ডিএসইর চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে যেকোন ধরণের সহযোগিতা ডিএসই করবে।

কোম্পানি তালিকাভুক্তির প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের অনেক বাধা রয়েছে যেমন-উদ্যোক্তাদের মানসিকতা, আমলাতন্ত্র, সঠিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া, আইপিওর দীর্ঘসুত্রীতা, বহুজাতিক কোম্পানির ক্ষেত্রে মূল দেশ থেকে তহবিল প্রাপ্তি, রাজস্ব গোপন করার প্রবণতা, নীতির অসামঞ্জস্যতা, কর বৈষম্য, ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজে ঋণ ইত্যাদি৷

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সকল সূচক ইতিবাচক থাকার কারণে পুঁজিবাজারের উন্নয়নের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে৷ আর এজন্য পলিসি সাপোর্টের দিকে না তাকিয়ে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে৷ এ বিষয়ে পূর্বে আপনারা যেভাবে ভূমিকা রেখেছেন, ভবিষ্যতেও আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ পুঁজিবাজারকে একটি শক্ত অবস্থানে নিবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস৷ চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারের সমস্যা একদিন আলোচনা বা সেমিনার করে সমাধান করা সম্ভব নয়। নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর অনেকগুলো বিষয়কে দেখতে হয়। এ অবস্থায় আমাদের একটি মাল্টিডাইমেনশন বডি তৈরি করা উচিত, যারা বাজারের সঠিক পর্যালোচনার মাধ্যমে কিভাবে মার্কেটকে উঠানো যায়, সেই দিক নির্দেশনা তৈরি করবে, যেটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা দিতে পারবো।

জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদানের কথা প্রসঙ্গে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, বাজারের গভীরতা অর্জনে ভাল মৌলভিত্তি সম্পন্ন স্থানীয় ও বহুজাতিক কোম্পানি দ্রুত তালিকাভুক্ত করণের কোন বিকল্প নেই। আর এ বিষয়ে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে অবদান রাখতে হবে৷ এ কাজগুলো করতে পারলে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে৷ পুঁজিবাজারের সেতুবন্ধক হিসেবে আপনারা বাজারে বিনিয়োগকারী ও কোম্পানিগুলোকে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে প্রত্যাশিত পুঁজিবাজার গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন৷

এর আগে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম সাইফুর রহমান মজুমদার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ডিএসই পুঁজিবাজারের সকল মার্চেন্ট ব্যাংকার্স প্রতিনিধি বৃন্দের সাথে তালিকাভুক্তি সংক্রান্ত সমন্বয় সভা করছেন মূলত: বাজারের গভীরতা বৃদ্ধি তথা ভাল কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে৷ মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান কাজ হচ্ছে পুঁজিবাজারে ভাল ভাল কোম্পানি তালিকাভূক্ত করা। যা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে প্রতি আকৃক্ট করে।

সভায় বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রেসিডেন্ট মোঃ ছায়েদুর রহমান বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে যখন প্রস্তাব দেয়া হয়, তখন কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে তাদের লাভ কি সে বিষয়ে জানতে চায়। কিন্তু মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো তাদেরকে লাভের বিষয়ে বলতে পারে না। কারণ মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোই জানে না যে তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানিগুলোর কি লাভ হবে। বাজারে তালিকাভুক্তি ও বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে অনেকবার কথা হয়েছে এবং তাদেরকে বেশ কিছু বিষয় বুঝানো হয়েছে। দীর্ঘদিন বুঝানোর ফলে বিএসইসি অনেক কিছু আমলে নিলেও এনবিআর এখনো কোনো বিষয় আমলে নেয়নি। ফলে তালিকাভুক্ত হলে কোনো লাভ হবেনা দেখে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হচ্ছে না বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, বর্তমানে কোম্পানিগুলো ব্যাংক নির্ভরতা। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে কোম্পানির এক দেড় বছর সময় লাগে। কিন্তু ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে সময় লাগে দুই থেকে তিন মাস। এই সময়ক্ষেপণ কমানো না যায়, তাহলে তালিকাভুক্ত বাড়ানো যাবে না।

তিনি বলেনন, সরকারী হিসেবে কোম্পানি আছে ২ লাখের বেশি। কিন্তু মার্কেটে আছে ৩৫০ টি কোম্পানি। যা ২ শতাংশের কম। কারণ তাদের তালিকাভুক্ত হওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তিন বছরের মধ্যে তালিকাভুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায়, সময় বেশি লাগলেও বর্তমানে পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বেশি বলে জানান তিনি।

বিএমবিএ সভাপতি বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংকের অবস্থার উন্নয়ন করতে পারলে আইপিও বাড়বে। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে বাধাগ্রস্থ হয়। তাদেরকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো কর দিতে হচ্ছে। কিন্তু তারা অর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুযোগ সুবিধা পায় না এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গন্য করা হয় না।

এসময় তিনি তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের ব্যবধান বাড়ানোর বিষয়টি এনবিআরকে আবারো বিবেচনা করার আহবান জানান।

এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন ডিএসই’র প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা খাইরুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ, লংকা বাংলা ইনভেস্টমেন্ট এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আলম, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেনারেল ম্যানেজার মাজেদা খাতুন, আইডিএলসি ইনভেস্টম্যান্ট লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজা উদ্দিন আহমেদ, এএএ ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড-এর পরিচালক মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান।

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে